hijab

জানুন হিজাবের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ এবং বদলে ফেলুন নিজের জীবন

পর্দার আরবি শব্দ হচ্ছে হিজাব। এর শাব্দিক অর্থ প্রতিহত করা, বাধা দান করা, গোপন করা, আড়াল করা, ঢেকে রাখা ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় প্রাপ্তবয়স্ক নারীদেরদের গাইরী মাহরাম (বিবাহ বৈধ) পুরুষ থেকে পা হতে মাথা পর্যন্ত ঢেকে রাখাকে পর্দা বা হিজাব বলে।এককথায় নারীদের কোরআন ও সুন্নাহ নির্দেশিত পোশাককে হিজাব বলে।

হিজাব একটি বিশেষ পরিভাষা: ইসলামী শরিয়তে পর্দার বিধানের ক্ষেত্রে হিজাব একটি বিশেষ পরিভাষা। হিজাব শব্দ দ্বারা পর্দার সামগ্রিক বিধান বুঝানো হলেও নারীদের পর্দা সংরক্ষণের নিমিত্তে ব্যবহৃত বিশেষ পোশাককেও হিজাব বলা হয়। অবশ্য তা পর্দার প্রতিভূ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। 

হিজাব যখন আর্থিক মর্মার্থের দিক থেকে ব্যবহৃত হয় তখন তা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর যখন হিজাব নামক বিশেষ পোশাক বুঝানো জন্য ব্যবহৃত হয় তখন তা শুধুমাত্র নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ ক্ষেত্রে জিলবাব,

খুমুর.নেকাব,বড় চাদর ইত্যাদিও হিজাব নামক পোষাকের সহযোগী পোষাক কিংবা হিজাবের অন্তর্ভূক্ত পোশাক হিসেবে পরিগণিত হয়। (হিজাব ও বাস্তবতা, পৃষ্ঠা-১৩-১৪)।

নারীদের এ ব্যবস্থা মেনে চলা ইসলামের দৃষ্টিতে ফরজ। এতে কোনো সন্দেহ নেই এই ব্যবস্থায় নারীর কল্যাণ ও মঙ্গল রয়েছে। যা কিনা এই আধুনিক যুগেও বিজ্ঞানের মানদন্ডে উন্নীত। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে হিজাবের আদেশ দিয়ে বলেন,

‘ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা আন নূর, আয়াত:৩১)।

আল্লাহ তায়ালা নারীদেরকে উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গ বাদে সকল পুরুষের সঙ্গে হিজাব করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ পর্দার নির্দেশ দিয়ে আরো বলেন, 

‘হে বনী-আদম আমি তোমাদের জন্যে পোশাক অবর্তীণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবর্তীণ করেছি সাজ-সজ্জার বস্ত্র এবং পরহেজগারীর পোশাক, এটি সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর কুদরতের অন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে ’ (সূরা আল আরাফ, আয়াত: ২৬)।

মহানবী (সা.) বলেন, নারীদের সবটাই লজ্জাস্থান (গোপনীয়)। আর সে যখন বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে পরিশোভিতা করে তোলে। (তিরমিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ হা: ৩১০৯)।

অতএব, উপরোক্ত কোরআন ও হাদিস অনুসারে বিবাহ বৈধ পুরুষদের সামনে সর্বাবস্থায় নারীদের জন্য হিজাব  তথা পর্দা পালন করা অবশ্যই কর্তব্য। ইসলাম স্বভাব ধর্ম। প্রত্যেক ব্যাপারে সাধারণ বিবেক ও শারীরিক-সুস্থ মন যে পথ অবলম্বন করে ইসলামও সেটাই অবলম্বন করে। ইসলাম কোনো বিশেষ বোঝা মানুষের জন্য নির্ধারণ করেনি। 

আল্লাহ বলেন,

‘রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তায়ালার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’ (সূরা: বাক্বারাহ, আয়াত: ১৮৫)।

এই মূলনীতি অনুযায়ী মানবজাতির জন্য যে পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, সেখানে মুসলিমদের আল্লাহ প্রদত্ত হুকুম মেনে স্বাচ্ছন্দ্য, সৌন্দর্য, সহজ চলাচল, কার্যোপযোগিতা, আবহাওয়া-জলবায়ু পরিবেশ ও সমাজ প্রভাব-এসব নিরিখে হিজাবের বিধান ইসলাম দিয়েছে। যা কিনা বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণায় হিজাব করার যৌক্তিকতা ও সুফল সহজেই প্রমাণিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *