আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘(হে নারীগণ!) তোমরা ঘরের মধ্যে অবস্থান করবে, অজ্ঞতার যুগের নারীদের মত নিজেদের প্রদর্শন করবে না। আর নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত আদায় করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে।’ (সুরা আহযাব : আয়াত ৩৩)
কুরআন মাজিদের অনেক স্থানে আল্লাহ তা’আলা নারীদের পর্দা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। উপরোক্ত বাণী থেকেও ইহা সুস্পষ্ট যে নারীদের পর্দা করতে হবে এবং পর্দা করা নারী মোটেও অনাধুনিকতার পরিচয় বহন করে না। বরং বেপর্দা নারীদেরকে অজ্ঞাত যুগের নারীদের সমতুল্য বলা হয়েছে। তাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অবাধ চলাফেরা ও খোলামেলা পোশাক পরিধান থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। কারন ইহা সমাজ ও ধর্মের দৃষ্টিতে মোটেও শোভনীয় নয়। আর ইসলাম ধর্মে নারীদের পর্দার প্রসঙ্গে কঠোরভাবে হিজাব পরিধানের কথা বলা হয়েছে।
তবে যুগের দোহায় দিয়ে বা আধুনিকতায় সামিল হতে আজকাল অনেকেই হিজাবকে ফ্যাশনের জন্য ব্যবহার করছে। যার ফলে পর্দার থেকে বেপর্দায় বেশি হচ্ছে। হিজাবের পরিধানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজের সৌন্দর্যকে গোপন করা। নিজেকে এমনভাবে ঢেকে রাখা যাতে কেউ তার প্রতি আকর্ষিত না হয়। যাতে তাকে বাহ্যিকভাবে শালীন ও বিনয়ী মনে হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই জেনে বা না জেনে সঠিকভাবে হিজাব পরিধান করি না। এতে আমাদের পর্দা করার উদ্দেশ্যে যেরূপ ব্যাঘাত ঘটছে, সেরূপ পাপের ভাগিদারও হতে হচ্ছে। তাই ধার্মিক নিয়মে হিজাব পরিধান করা অত্যন্ত জরুরী।
সহজ ও আমাদের ধর্মের ভাষায় হিজাব পরিধানের নিয়ম হলঃ
১। মাথার কাপড় শরীরের বক্ষাদেশ পর্যন্ত ঢেকে রাখবে।
২। কোনো পরিস্থিতিতেই মাথার চুল দেখা যাওয়া যাবে না।
৩। সম্পূর্ণ মুখমন্ডল কাপড় দ্বারা আবৃত থাকবে। তবে হজ্বের ক্ষেত্রে ভিন্ন বিধান রয়েছে।
৪। পথ দেখার জন্য চোখ অনাবৃত রাখা যাবে।
৫। কাপড় ঝুলে থাকতে হবে এবং কাপড়ের ভিতর দিয়ে শরীর দেখা যাওয়া যাবে না।
৬। হিজাবের নিচে পরিহিত কাপড়ের সৌন্দর্য ঢেকে রাখতে হবে।
হিজাব পরিধান নিয়ে আরেকটি মতবাদ চালু আছে যেখানে নারীর মুখমন্ডল খোলা রাখা যাবে, তবে মাথা, চুল, কান, গলা ও বক্ষাদেশ আবৃত থাকতে হবে। যারা মুখ ঢেকে রাখলে সঠিকভাবে শ্বাস নিতে পারে না, তারা এইভাবে হিজাব পরিধান করে থাকে। তবে এই মতবাদ অনেকটাই বিতর্কিত। যদি কোনো অবস্থায় নারীর সৌন্দর্য বাহ্যিকভাবে প্রকাশ পায়, তাহলে হিজাবের উদ্দেশ্য সঠিক ভাবে পালন হবে না।
আল্লাহ তা’আলা কুরআন মাজিদে ঈমানদার নারীকে হিজাব পরতে নির্দেশ দিয়ে বলেন-
“তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না তাদের দেহের (বুকের) ওপর ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাইয়ের পুত্র, বোনের পুত্র, অধিকারভূক্ত নারী দাসী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গেপান অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতিত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।“ (সূরা নূর: আয়াত ৩১)
পরিশেষে, নারী ও পুরুষ উভয়ের ওপরই পর্দা করা ফরয করা হয়েছে। আধুনিক যুগের অনেক নারীরাই মনে করে থাকেন যে তাদের পর্দা করার দরকার নেই, পুরুষ তাদের চোখ সংযত রাখলেই হবে। সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে যে সেটা পুরুষের ওপর ন্যায্য করা হয়েছে যা অমান্য করলে তার শাস্তি তারা পাবে। নারীদের ওপর পর্দা করার আদেশ দেয়া হয়েছে শুধু পুরুষকে রক্ষা করার জন্য নয়। বরং হিজাব বা পর্দা নারীকে শয়তানের প্ররোচনা ও কুপ্রবৃত্তি থেকে নিরাপদ রাখে। নারীদের নিরাপত্তা ও চারিত্রিক পরিশুদ্ধতার জন্যই নারীদের ওপর হিজাব তথা পর্দার বিধান দেয়া হয়েছে। হিজাব তথা পর্দার মাধ্যমেই নারীদের শালীনতা ও বিনয়ী মনোভাব প্রকাশ পায় যা তাদের সুন্দর চরিত্রের পরিচয় বহন করে। পাশাপাশি হিজাব নারীদেরকে মানুষের কুদৃষ্টি ও ফিতনা থেকে নিরাপত্তা দেয়। যা তাদের নিজেদেরকে ও অন্যদেরকে গুনাহগার হওয়া থেকে রক্ষা করে।
আল্লাহ তা’আলা মুসলিম উম্মাহর সকল নারীকে হিজাব পরিধান করে সুন্দর ও ক্লুষমুক্ত সমাজ উপহার দেয়ার তওফিক দান করুক। আমিন।